বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বোঝার জন্য বাক্যের মধ্যে বা বাক্যের সমাপ্তিতে কিংবা বাক্যে আবেগ (হর্ষ, বিষাদ), জিজ্ঞাসা ইত্যাদি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে বাক্য গঠনে যেভাবে বিরতি দিতে হয় এবং লেখার সময় বাক্যের মধ্যে তা দেখানোর জন্য যেসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তা-ই যতি বা ছেদচিহ্ন ।
নিচে বিভিন্ন প্রকার যতিচিহ্নের নাম, আকৃতি এবং তাদের বিরতি কালের পরিমাণ নির্দেশিত হলো
যতি বা ছেদচিহ্নের ব্যবহার
১. কমা [পাদচ্ছেদ (,)
ক) বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ-বিভাগ দেখানোর জন্য যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন— সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।
খ) পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ছাড়া বাকি সবগুলোর পরই কমা বসবে। যেমন— সুখ, দুঃখ, আশা, নৈরাশ্য একই মালিকার পুষ্প।
গ) সম্বোধনের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন— রশিদ, এদিকে এসো ।
ঘ) জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেক খণ্ডবাক্যের পরে কমা বসবে। যেমন— কাল যে লোকটি এসেছিল, সে আমার পূর্বপরিচিত।
ঙ) উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে (খণ্ডবাক্যের শেষে) কমা বসাতে হবে। যেমন— সাহেব বললেন, “ছুটি পাবেন না।”
চ) মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর ‘কমা' বসবে। যেমন— ১৬ই পৌষ, বুধবার, ১৩৯৯ সন।
ছ) বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পরে কমা বসবে। যেমন— ৬৮, নবাবপুর রোড, ঢাকা-১০০০ ।
জ) নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযোজিত হলে সেগুলোর প্রত্যেকটির পরে কমা বসবে। যেমন - ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, এম.এ. পি-এইচ-ডি।
২. সেমিকোলন (;)
কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে, সেমিকোলন বসে। যথা— সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা; এ মায়ার বাঁধন কি সত্যিই দুশ্ছেদ্য?
৩. দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।)
বাক্যের পরিসমাপ্তি বোঝাতে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়। যথা— শীতকালে এ দেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।
৪. প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)
বাক্যে কোনোকিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে। যেমন— তুমি এখন এলে? সে কি যাবে?
৫. বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন (!)
হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে হলে এ সম্বোধন পদের পরে (!) চিহ্নটি বসে। যেমন-
আহা! কী চমৎকার দৃশ্য ৷
জননী। আজ্ঞা দেহ মোরে যাই রণস্থলে।
কিন্তু আধুনিক নিয়মে সম্বোধন স্থলে কমা চিহ্নের ব্যবহার করা হয়।
৬. কোলন (:)
একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে হলে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- সভায় সাব্যস্ত হলো : একমাস পরে নতুন সভাপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
৭. ড্যাস চিহ্ন (—)
যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাস চিহ্ন ব্যবহৃত
হয়। যেমন- তোমরা দরিদ্রের উপকার কর- এতে তোমাদের সম্মান যাবে না-বাড়বে।
৮. কোলন ড্যাস (:-)
উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করতে হলে কোলন এবং ড্যাস চিহ্ন একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়। যেমন-পদ পাঁচ প্রকার:- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া
৯. হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-)
সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর জন্য হাইফেনের ব্যবহার হয়। যেমন— এ আমাদের শ্রদ্ধা-অভিনন্দন, আমাদের প্রীতি—উপহার ।
১০. ইলেক (') বা লোপ চিহ্ন
কোনো বর্ণ বিশেষের লোপ বোঝাতে বিলুপ্ত বর্ণের জন্য (') লোপচিহ্ন দেওয়া হয় । যেমন-
মাথার ‘পরে জ্বলছে রবি (‘পরে=ওপরে)
পাগড়ি বাঁধা যাচ্ছে কারা? (কা'রা=কাহারা)
১১. উদ্ধরণ চিহ্ন ("")
বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। যথা-শিক্ষক বললেন, “গতকাল তুরস্কে ভয়ানক
ভূমিকম্প হয়েছে।”
১২. ব্র্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন ( ), { }, [ ]
এই তিনটি চিহ্নই গণিতশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রথম বন্ধনীটি বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন – ত্রিপুরায় (বর্তমানে কুমিল্লা) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ব্যাকরণিক চিহ্ন বিশেষভাবে ব্যাকরণে নিম্নলিখিত চিহ্নগুলো ব্যবহৃত হয় ।
(ক) ধাতু বোঝাতে (√) চিহ্ন : √স্থা =স্থা ধাতু।
(খ) পরবর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বোঝাতে (<) চিহ্ন: জাঁদরেল < জেনারেল।
(গ) পূর্ববর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বোঝাতে (>) চিহ্ন: গঙ্গা > গাও ৷
(ঘ) সমানবাচক বা সমস্তবাচক বোঝাতে সমান (-) চিহ্ন : নর ও নারী = নরনারী।